কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত 


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৫:৪৮ পিএম, ২০২৩-০৮-০৬

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত 

গত কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বান্দরবান শহরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার ও মহল্লায় পানিতে ডুবে গেছে ঘরবাড়ি দোকানপাট। সড়কের মধ্যেও পানি জমে কোমর পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা । এতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষ অত্যন্ত ঝূঁকিতে রয়েছে। বান্দরবান পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনীহা দেখাচ্ছেন ঝুঁকিতে থাকা সেসব পরিবার। এতে ঘটেছে প্রায় সময় পাহাড় ধ্বসের দুর্ঘটনা।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জেলা শহরে পৌর এলাকা, আলীকদম সদর এবং লামা পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার।

আর্মি পাড়া বাসিন্দা সালমা ও রিয়াজ বলেন, গতকাল থেকে ভয়ে ছিলাম পানি উঠবে। তাই সবকিছু আগেভাগে গুছিয়ে রেখে ছিলাম। আজ সকাল থেকে এই বৃষ্টিতে পানি বেড়ে ঘরে ঢুকে গেছে। এখন ৭টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি।

জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯ টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৯১ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা কয়েকদিন লাগাতার বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদীতে বেড়েছে পানি । এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ডুবেছে ঘর বাড়িও। এদিকে পুরো জেলায় এরইমধ্যে ২০৭ টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছে প্রশাসন। আশ্রয়ের জন্য অনেকে ভীড় করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে । তাছাড়াও গত ৫বছরে বান্দরবান জেলায় অনাবরত বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসে প্রাণ গেছে ৬৩ জনের। চলতি বছরেও একইভাবে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসে আশংকা দেখা দেওয়াতেই আতঙ্কে রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা।

বনরুপা ও ফ্যান্সিঘোনা বাসিন্দা সৈয়দ ও খলিফা বলেন, কয়েকদিন ধরে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে সেভাবে হলে পাহাড় ধ্বসে পড়বে। সারারাত ঘুমাতে পারিনাহ। আতঙ্ক নিয়ে থাকি। আর আমাদের নিজস্ব কোন জায়গায় নাই। তাই কোথায় যাব আমরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাঘাটা, ফ্যান্সি ঘোনা, বীর বাহাদুর নগর, বনরুপা, ইসলামপুর,লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা সহ আরো বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। টানা এই বৃষ্টিতে ধ্বসে পড়ছে পাহাড়। তবে এখনো পর্যন্ত কোন হতাহতে ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও এই বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক, মহল্লা ও জমি চাষবাদ। পৌর এলাকার আর্মি পাড়া, ইসলামপুর সহ বিভিন্ন কয়েকটি স্থানে এই বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কয়েকশ বাড়ি। সেসব লোকজন ঠাই নিচ্ছেন আশ্য় কেন্দ্রে। শুধু তাই নয় বান্দরবান –বালাঘাটা সড়ক ডুবে যাওয়াতেই কোমর পর্যন্ত তলিয়ে গেছে সড়ক, স্কুল ও আশে পাশে বাড়িঘর। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থী,যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ। রাস্তা তলিয়ে যাওয়াতেই পড়ুয়া স্কুল শিক্ষার্থীরা অনেকে রাস্তা পাড় হচ্ছেন ভ্যানগাড়িতে করে আবার কেউ হেটে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর রমেশ চাকমা, হাবিবসহ কয়েজন বলেন, সকালে ১০টা পর থেকে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে পানিতে সড়ক ডুবে গেছে। এখন সড়কের কোমর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। তাই ভিজে ভিজে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে।

বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সিনিয়র স্টাফ অফিসার নাজমুল আলম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসে পড়ছে। আমরা ওইসব জায়গায় যাচ্ছি। মাইকিং করছি। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার জন্য বলছি।

বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নার্গিস সুলাতানা বলেন, আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সবাই সভা করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নেও সভা করা হয়েছে। সবখানে মাইকিং করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে আসার জন্য বলা হচ্ছে। এখনো বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। ছোট খাটো পাহাড় ধস হয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই যদি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে আসে তাহলে আমরা বড়ধরনের ঘটনা থেকে রক্ষা পাবো। উপজেলা গুলোতেও শুকনো খাবার এবং অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করি খাবারের কোন সংকট হবে না।